রাতের আকাশের মনমাতানো রূপ দেখে যারা রোমান্টিকতায় হারিয়ে যেতে চান, তাঁদের জন্য এক দারুণ খবর ! আগামী কয়েকদিন কালো আকাশের ‘ব্যাকড্রপে’ রাতভর চলবে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি গ্রহের ‘টুইস্ট ডান্স’ । সারাটা রাত সেই দৃশ্য দেখে বসন্তের মায়াঘন রাত কেমন করে কেটে যাবে বোঝাই যাবেনা !
এক বিরল মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছি আমরা । আগামী মার্চ মাসের কয়েকদিন রাতের আকাশে পৃথিবী থেকে পাঁচটি গ্রহ দৃশ্যমান হবে । সেগুলো হল বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি আর শনি । উল্লেখ্য যে পৃথিবী থেকে খালি চোখে শুধু এই গ্রহগুলোই দেখা যায় । আসলে ইউরেনাস আর নেপচুন গ্রহকে কখনো খালি চোখে পৃথিবী থেকে দেখা যায় না । যদি দেখা যেত তাহলে জ্যোতিষ বন্ধুরা তাঁদের জ্যোতিষ শাস্ত্রে মানুষের উপর এই দুটি গ্রহের প্রভাব নিয়ে লিখে ফেলতেন নানা আজগুবি কথা । হয়তো আরও দু’টো রত্ন বা পাথর এদের নামের সঙ্গে যুক্ত হত ! যাই হোক সেই গল্প এখন থাক । মনে রাখতে হবে যে ইউরেনাস আর নেপচুন গ্রহকে দেখতে হলে শক্তিশালী দূরবীন দিয়ে দেখতে হয় । সৌরজগতের আটটি গ্রহের সংসারে তেমন বিরল সময় খুব কমই আসে যখন এই পাঁচটি গ্রহ পৃথিবী থেকে খালি চোখে একসঙ্গে দেখা যায় ।
রাতের আকাশে অগণিত নক্ষত্রের ভিড়ে তাহলে গ্রহদের খুঁজে বের করা কেমন করে ? আসলে গ্রহ আর নক্ষত্রের মধ্যে মূল পার্থক্য হল- নক্ষত্রের আলো মিটমিট করে, কিন্তু গ্রহের আলো স্থির । রাতের আকাশে তাই নক্ষত্রের ভিড়ে গ্রহগুলো এক আলাদা ‘পার্সোনেলিটি’ নিয়ে সবার সামনে হাজির হয় । এবার জেনে নেওয়া যাক গ্রহদের অবস্থান গুলো । আজ সন্ধ্যা ৫:৩০টে থেকে ৬:০৫ পর্যন্ত পশ্চিম আকাশে চোখ রাখলেই নজরে আসবে গুরুজী বৃহস্পতি আর তাঁর দুই শিষ্য শুক্র আর বুধের অসাধারণ নৃত্য । এদের ঠিক উপরেই চাঁদমামা মুচকি হেসে ট্যারা চোখে পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করবেন, আর সবার অলক্ষ্যে অল্পবিস্তর কোমরও দোলাবেন । এই তিনটি গ্রহ আর চন্দ্র তখন পশ্চিমাকাশে প্রায় সরলরেখায় অবস্থান করবে । এদিকে পূর্বাকাশে নজরে আসবে তখন আর এক দৃশ্য! ‘লালুজী’ মানে ‘লালগ্রহ মঙ্গল’ চুপচাপ পূর্বদিকে দাঁড়িয়ে পরবর্তী দৃশ্যপটের জন্য নিজেকে তৈরী করবেন । পশ্চিমাকাশের নৃত্যের রেশ মিলিয়ে যেতে না যেতেই পূর্বাকাশে শুরু হয়ে যাবে লালুজীর ‘রক ডান্স’ । তাঁর রকডান্সে সঙ্গত করতে রাত প্রায় সাড়ে নয়টায় জবরদস্ত ‘এন্ট্রি’ মারবেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শনি । রাশগম্ভীর শনিকে দেখে আপাতত ভয় পাবার কিছু নেই, কারণ তিনি নৃত্যে ব্যস্ত থাকার দরুণ আমাদের ঘাড়ে চেপে উঠবারও ভয় নেই । নির্দ্বিধায় রাতের লাইভ শো-এর মজা উপভোগ করা যাবে । সারাটা রাত ধরে চলবে হাসি হুল্লোরের ফোয়ারা । তারপর কিভাবে রাত কেটে ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়ায় কোকিলের গানে সকালের শুরুয়াত হয়ে যাবে বোঝাই যাবেনা । বসন্তের এই মাসে ঘুম বাবাজীকে এক রাতের জন্য ‘ডিভোর্স’ দিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হতে মন্দ লাগবে না, কি বলেন ?