Sunday, August 28, 2011

তোমরা কেউ কি ওখানে আছো ?

উত্তেজনায় নড়েচড়ে বসলেন জোসলিন বেল বারনেল । রেডিও টেলিস্কোপে ধড়া পড়েছে এক আজব রেডিও তরঙ্গ । অজানা আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠলো সদ্য গবেষণায় পা রাখা মেয়েটির । সত্যিই কি ভিনগ্রহের কেউ  পৃথিবীতে বার্তা প্রেরণ করছে ? ব্যাপারটি তিনি জানালেন তাঁর সুপারভাইজার অ্যান্টনি হেউইস-কে ।  খবরটি পেয়ে তিনিও উত্তেজিত হয়ে উঠলেন । তারপর দুজনে মিলে বহির্বিশ্বের নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে আসা তরঙ্গকে  কয়েকদিন ধরে অধ্যয়ন করেই চললেন । কিন্তু বার্তার পাঠোদ্ধার হয়ে উঠলোনা । অবশেষে গাইড আর ছাত্রী উভয়েই সেই রেডিও তরঙ্গের উৎসের এক জম্পেশ নামও দিলেন ছোট সবুজ মানুষ উনারা ধরে নিলেন যে কোনো ভিন গ্রহের মানুষ এই তরঙ্গ প্রেরণ করছে । কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী যেন জোসলিনের হাতের স্পর্শে জীবন্ত হয়ে উঠলো ।  এলিয়েনদের নিয়ে গুল গল্পের তাহলে এতদিনে অবসান ঘটতে চলল ! কিন্তু কে ভেবেছিল ২৮ নভেম্বর ১৯৬৭ সালের সেই দিনটিতে এক অভাবনীয় আবিষ্কার করে ফেলবেন জোসলিন ! 
     জোসলিন এবং হেউইস এর আবিষ্কার ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হবার পর সারা বিশ্বে শোরগোল পড়ে গেল । ছোট সবুজ মানুষ নিয়ে নুতন বিতর্কের জন্ম হল । তবে এই বিতর্কের রেশ বেশীদিন স্থায়ী হয়নি, কারণ থমাস গোল্ড নামে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী সে বছরই প্রমাণ করলেন যে আসলে সেটা ছিল এক আবর্তনশীল নিউট্রন তারা বা পালসার (পালসেটিং স্টার) । কোন নিউট্রন তারা যখন খুব তীব্র গতিতে নিজ অক্ষে পাক খেতে থাকে তখন সে রেডিও তরঙ্গ বিচ্ছুরণ করে । আর রেডিও টেলিস্কোপে সেই তরঙ্গই ধরা পড়েছিল । এই পালসারের চরিত্র সমুদ্রে দাঁড়িয়ে থাকা লাইট হাউসের সঙ্গে দারুণভাবে মিলে যায় । লাইটহাউসে যেমন নির্দিষ্ট সময় পর পর আলো দেখা যায় ঠিক তেমনি পালসার এর তরঙ্গও নির্দিষ্ট সময় পর পর ধরা দেয় । মনে হবে যেন কোন সিগনাল প্রেরণ হচ্ছে । পি এইচ ডি স্কলার জোসলিন বেল বারনেলের নাম জুড়ে গেল প্রথম পালসার আবিষ্কারক হিসেবে । পালসার-টির নামকরণ হল -সি পি ১৯১৯ ।  ভিনগ্রহী জীবের উপস্থিতির ব্যাপারটা তখন জোর ধাক্কা খেল । বেলের আবিষ্কার থেমে থাকেনি, তারপর তিনি আরো কয়েকটি পালসার আবিষ্কার করেন । ১৯৭৪ সালে জোসলিনের সুপারভাইজার অ্যান্টনি হেউইস-কে পালসারের আবিষ্কারক হিসেবে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় । তিনি পুরস্কারটি স্যর মার্টিন রাইল-এর সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন । নোবেল পুরষ্কারের ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে এই সম্মানে ভূষিত হন । কিন্তু দুঃখের ব্যাপার জোসলিনকে সেই সম্মান দেওয়া হয়নি, আর সেটা নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি । একজন ট্র্যাজেডি নায়িকা হয়েও নোবেল কমিটির উপর জোসলিনের কোন ক্ষোভ ছিলনা ।
     আমাদের সৌরজগতের বাইরেও কি কোন গ্রহ আছে ? আর সেই গ্রহে কি প্রাণের স্পন্দন থাকতে পারে ? মানুষ থেকেও উন্নত প্রাণী বহির্বিশ্বে থাকা সম্ভব কি ? অগণিত নক্ষত্র খচিত রাতের আকাশের দিকে চোখ রাখলে এমন প্রশ্ন মনে আসা স্বাভাবিক ।  আর তাই মানুষের কল্পনার জগতে আগমন ঘটতে লাগলো ভিনগ্রহী মানুষ বা এলিয়েন যারা নাকি মানুষ থেকেও প্রখর বুদ্ধিমান । ধীরে ধীরে কল্পবিজ্ঞানের কাহিনীতে আবির্ভূত হতে লাগলো বিদঘুটে সব এলিয়েন । আর্থার সি ক্লার্ক, কলিন হার্ভে, উইলিয়াম হিগস্মিথ ইত্যাদি কল্পবিজ্ঞান খ্যাত লেখক লিখতে লাগলেন দমবন্ধ হীন অবিশ্বাস্য গল্প। কিছু লেখক আবার এলিয়েনদের নিয়ে বাস্তব ঘেঁষা বই লিখতে লাগলেন । এখানে উল্লেখ করতে হয় এরিক ভন দানিকেনের । তার বিতর্কিত বইয়ের শিরোনাম ছিল দেবতা কি গ্রহান্তরের মানুষ ?দানিকেন কিছু বৈজ্ঞানিক তত্বের উল্লেখ করে বলতে চেয়েছিলেন যে মিশরীয় সভ্যতা, মায়া সভ্যতা ইত্যাদি সভ্যতার অগ্রগতির পেছনে রয়েছে ভিনগ্রহী মানবের পৃথিবীতে আগমন । এছাড়া আরো নানা ঘটনার আলোচনা করে তিনি বাজারে এই থিওরি প্রচার করতে চেয়েছিলেন যে দেবতারা আসলে এলিয়েন । শুরু হল বিতর্ক । দানিকেনের যুক্তিতর্ক ধোপে টিকেনি । বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেন যে দানিকেনের তত্ব ভুয়ো । নিছক ব্যবসার জন্যই তিনি এই পথ অবলম্বন করেছিলেন । তারপর যে বিষয় নিয়ে একটা সময় গোটা বিশ্বে চাঞ্চল্য দেখা দেয় সেটা হল ইউ এফ ও (আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লায়িং অবজেক্ট) বা উড়ন্ত চাকি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পৃথিবীর নানা স্থানে বিশাল মহাকাশযান দেখা যায়  যেগুলো নাকি প্লেটের মত দেখতে । এই উড়ন্ত চাকি নাকি হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে কিছুক্ষণ থেকে তারপর গায়েব হয়ে যেত । নানা প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে উড়ন্ত চাকির গল্প উপকথা হয়ে উঠল । এখনো পাশ্চাত্য দেশে ইউ এফ ও নিয়ে নানা চাঞ্চল্যকর গল্প শুনা যায় । কিন্তু বিজ্ঞানের পাতায় ইউ এফ ও আজ পর্যন্ত নাম নথিভুক্ত করতে পারেনি । উপকথা বাস্তব হয়ে উঠেনি ।  সাহিত্যের অঙ্গন ছেড়ে ধীরে ধীরে কল্পনার ভিনগ্রহী মানুষ সেলুলয়েডের পর্দায় জ্যান্ত হয়ে উঠলো । হলিউডের ক্যারিসমাটিক স্পর্শে ই টি, মেন ইন ব্ল্যাক ইত্যাদি মুভি বিশ্বের বাজার তোলপাড় করে তুলল । বলিউডের কোই মিল গেয়া সাম্প্রতিক সংযোজন । বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে পা মিলিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলও বাড়তে লাগলো । এলিয়েনদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কি কোনো উপায় নেই ?
     ভাবতেই অবাক লাগে যে মাত্র একশো বছর আগেও কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করতেন যে মঙ্গল গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী রয়েছে । ১৮৯৬ সালে নিকোলা টেসলা প্রথম প্রস্তাব দেন যে রেডিও-এর সাহায্যে ভিনগ্রহী প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে । তারপর কিছু বিজ্ঞানীরাও টেসলার এই প্রস্তাবে সায় দেন । ১৯০০ সালের প্রথমদিকে বিখ্যাত বিজ্ঞানী মার্কোনি ভেবে বসেছিলেন যে তার রেডিওতে মঙ্গল গ্রহের প্রাণীদের পাঠানো বার্তা ধরা পড়ছে যা পাঠোদ্ধার করা যাচ্ছেনা । মজার ঘটনা হল ২১-২৩ আগস্ট, ১৯২৪ সালে যখন মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর সব থেকে নিকটে আসে তখন সারা বিশ্বে এক আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রশাসন, ন্যাভাল অবজারভেটরির বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের উপর কড়া নজর রেখেছিলেন পাছে সেখানের প্রাণীরা পৃথিবী আক্রমণ করে না বসে । কিন্তু মঙ্গল কোন অমঙ্গলের বার্তা নিয়ে আসলনা । বিজ্ঞানীদের যৌথ  প্রয়াসে অবশেষে গড়ে উঠল -সার্চ  ফর এক্সট্রা টেরিস্ট্রিয়েল ইন্টেলিজেন্স (সেটি) ইন্সটিটিউট । প্রাথমিক পর্যায়ে বহির্বিশ্বে প্রাণের সন্ধান করাই মূল কাজ হয়ে উঠলো । ১৯৬০ সালে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাঙ্ক ড্রেক প্রথম সেটি-এর জন্য  ২৬ মিটার ব্যাসের একটি রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করেন । প্রজেক্টটির নাম ছিল –‘প্রজেক্ট ওজমা মহাবিশ্বের নানা স্থানে রেডিও তরঙ্গ সন্ধান করাই ছিল এই টেলিস্কোপের মূল কাজ । ফ্রাঙ্ক ড্রেক অঙ্ক কষে একটি ফর্মুলা বের করেছিলেন যা ড্রেক সমীকরণ নামে পরিচিত এই সমীকরণের সাহায্যে মহাবিশ্বে কতটি গ্রহে প্রাণ থাকতে পারে তার একটা আভাস ছিল । সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ড্রেক সমীকরণ-এর সাহায্যে তেমন কটি গ্রহে পৃথিবীর মত প্রাণ থাকতে পারে তার একটি হিসেব কষেছেন । সংখ্যা প্রায় ৬৩ কোটি ! তবে কিছু বিজ্ঞানীরা এই সমীকরণের বিরুদ্ধেও তাদের যুক্তি তুলে ধরেছেন ।  বর্তমানে উন্নত যন্ত্রপাতির সাহায্যে সেটি তাদের অনুসন্ধান চালিয়েই যাচ্ছে ।
     আমাদের সূর্যের সবথেকে কাছের নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টরাই প্রায় ৪.২ আলোকবর্ষ দূরে  রয়েছে । এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে আলোর গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার । এই আলোর এক বৎসর অতিক্রম করাকেই এক আলোকবর্ষ বলা হয় । তার মানে পৃথিবী থেকে যদি আমরা বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে ঐ  নক্ষত্রে বার্তা প্রেরণ করতে চাই হ্যালো আমরা পৃথিবী নামক এক গ্রহ থেকে বলছি, তোমাদের খবর বল! , তাহলে সেটা পৌছাতে সময় লাগবে ৪.২ বছর ! আর যদি উত্তর আসে তাহলে আরো ৪.২ বছর । সর্বমোট ৮.৪ বছর ! যদি আমরা মহাকাশযান নিয়ে ঐ গ্রহের দিকে ধেয়ে যাই তবে আমাদের জীবদ্দশাতেও ওই নক্ষত্রে পৌছাতে পারবোনা । তাই বিজ্ঞানীরা পৃথিবী থেকে বহির্বিশ্বের নানা দিকে বার্তা পাঠানোর ব্যাপারটাকেই  সঠিক ভেবেছেন । যদি ধরে নেওয়া যায় যে এলিয়েন মানুষের মতই বুদ্ধিমান তবেই আমাদের পাঠানো বার্তা তারা পাঠোদ্ধার করতে পারবে । আর এই যুক্তিকে সামনে রেখেই একটি রেডিও বার্তা বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন যা অরেসিবো বার্তা নামে পরিচিত অরেসিবো রেডিও টেলিস্কোপ থেকে ১৬ নভেম্বর ১৯৭৪ সালে প্রথম ঐ বার্তা এম ১৩ নামক এক তারকাপুঞ্জের দিকে প্রেরণ করা হয় যা সূর্য থেকে ২৫০০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে । এই বার্তার মধ্যে মানব সভ্যতার নানা তথ্য ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে । যেমন-১ থেকে ১০ নম্বরের উপস্থিতি, জীব সৃষ্টির মূল উপাদান ডি এন এ এর আবিষ্কার, মানুষের পরিচিতি, সৌরজগতের গ্রহের সংখ্যা, টেলিস্কোপের আবিষ্কার ইত্যাদি । তবে এখনো পর্যন্ত কোনো জবাব আমরা পাইনি কারণ সেই বার্তা এতদিনে মাত্র ৩৭ আলোকবর্ষ দূরত্ব অতিক্রম করেছে ।
     আমাদের সৌরজগতের বাইরের নক্ষত্রগুলিতে কি গ্রহ আছে ? এ প্রশ্নটাই বিজ্ঞানীদের ভাবিত করে তুলেছিল । দূরবীক্ষণ যন্ত্রের আবিষ্কার রাতের আকাশকে নামিয়ে আনল মাটিতে । নিত্যনুতন আবিষ্কার পুলকিত করে তুলল আমাদের তথ্য ভাণ্ডারকে । ধীরে ধীরে মহাবিশ্বের কিছু কিছু রহস্য আমাদের কাছে পরিষ্কার হতে লাগলো ।  কিন্তু বহির্বিশ্বে গ্রহের উপস্থিতি পরীক্ষামূলক ভাবে প্রমাণ করা যাচ্ছিলোনা ।  কারণটা অবশ্যই দূরত্ব । আসলে একটি তারার আলোতেই আলোকিত হয়ে উঠে গ্রহ । আর দূরত্ব বাড়লে অতি শক্তিশালী দূরবীন দিয়েও গ্রহকে চিহ্নিত করা যায়না । তখন পরোক্ষ উপায়ের উপর নির্ভর করতে হয় । বিজ্ঞানীরা উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ১৯৮৮ সালে প্রথম সৌরজগতের বাইরে গ্রহের সন্ধান পান । শুরু হয় এক নুতন অধ্যায় । তারপর গ্রহ আবিষ্কারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান । সৌরজগতের বাইরে গ্রহের অস্তিত্ব জানার তাগিদেই কেপলারের জন্ম । জন্মের পর থেকেই সে  বহির্বিশ্বের দিকে ক্রমাগত নজর রেখে চলেছে । ওহ বলতেই ভুলে গেছি আসলে কেপলার কোন মানুষ নয়, সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা প্রেরিত একটি মহাকাশযান । জার্মানির বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী কেপলারের নামানুসারেই তার এই নাম যাকে গত ৭ মার্চ ২০০৯ সালে পৃথিবী থেকে প্রেরণ করা হয়েছিল । তারপর থেকেই তার জয়যাত্রা অব্যাহত । তার ঝুলিতে এখন ১২২টি  গ্রহ আবিষ্কারের কৃতিত্ব । এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৫৭৩টি বহির্বিশ্বের মধ্যে কিছু গ্রহ আবার আমাদের পৃথিবীর মতই । বিজ্ঞানীরা কোন কোন গ্রহে জলের অস্তিত্বের কথাও বলছেন । জল থাকলেই যে প্রাণের সম্ভাবনা প্রবল । তাই গবেষকেরা উৎফুল্লিত হয়ে উঠেছেন । হয়তো প্রাণের বীজ বপন হয়ে গেছে  সেইসব গ্রহতে । আসলে নুতন গ্রহের সন্ধান পেলেই দেখে নেওয়া হয় যে প্রাণ সৃষ্টির প্রাথমিক কাঁচামাল ঐ গ্রহে আছে কি না ।
সম্প্রতি আবার একটি খবর জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চমকে দিয়েছে । সৌরজগত থেকে প্রায় ৭৫০ আলোকবর্ষ দূরে একটি নুতন গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে যা নাকি কয়লার থেকেও কালো । সৌরজগতের সব থেকে বড় গ্রহ বৃহস্পতির মতই তার আকার । এই জাম্বো গ্রহের এক পোশাকি নামও দিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা - টি আর ই এস-২বি সৌরজগতের বাইরে এমন কৃষ্ণতম গ্রহের আবিষ্কারে আশ্চর্যান্বিত হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা । কয়লার থেকেও কালো এই গ্রহের ঔজ্জ্বল্য খুবই কম । গ্রহটির দূরত্ব তার নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে মাত্র ৩০ লক্ষ মাইল  । যেখানে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল ! এত কম দূরত্বের অবস্থানের জন্য এই জাম্বো গ্রহের তাপমাত্রা প্রায় ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস । গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে সোডিয়াম,পটাসিয়াম,টাইটানিয়াম অক্সাইড ইত্যাদি উপস্থিতির প্রমাণ রয়েছে ।  বিজ্ঞানীরা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না তার এত কালো হয়ে উঠার মূল কারণ । আসলে এখনো পর্যন্ত ৫৭৩ টি আবিষ্কৃত বহির্গ্রহের সঙ্গে এর চরিত্র যে কিছুতেই মিলছেনা । গ্রহটির কৃষ্ণাঙ্গ হবার নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানই হবে আগামীতে সবথেকে বড় আবিষ্কার । এই গ্রহটি গত ২১শে আগস্ট ২০০৬ এ আবিষ্কৃত হয়েছিল ট্রান্স-আটলান্টিক এক্সো প্ল্যানেট সার্ভের মাধ্যমে । মজার ব্যাপার হল গ্রহটি তখন আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে মহাকাশযান কেপলার চলতি মাসে তাকে বিশ্লেষণ করে এমন বিস্ফোরক তথ্য দিতে পারে । যেহেতু ঐ গ্রহে জল থাকার সম্ভাবনা খুবই কম, তাই প্রাণের উপস্থিতি সেখানে প্রায় নেই বললেই চলে ।  গ্রহটি কালো হলেও তার প্রতি বিজ্ঞানীদের আকর্ষণ কিন্তু এতটুকুও কমেনি ।   
     এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর বাইরে প্রাণের উপস্থিতির কোন পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই । কে জানে হয়তো আগামীতে সেটা সম্ভব হবে । তবে চিন্তার ব্যাপার যেভাবে কিছু ক্ষমতাধর অসৎ ব্যক্তি বিজ্ঞানের অপব্যবহার করে পৃথিবীর ধংসলীলায় মত্ত হয়েছে, এতে মানবসভ্যতার স্থায়িত্বের প্রশ্ন থেকেই যায় । পারমানবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমার আঘাতে মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পৃথিবী । কে বলতে পারে হয়তো আগামী শতাব্দীতে উড়ন্ত চাকী চেপে একদল এলিয়েন এসে এই গ্রহে উপস্থিত হতে পারে ।  কিন্তু প্রাণহীন গ্রহের ধ্বংস স্তূপে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া তখন তাদের আর কিছুই করার থাকবেনা ।

Saturday, August 20, 2011

সৌরজগতের বাইরে সবথেকে কৃষ্ণতম গ্রহ আবিষ্কৃত



যুগান্তকারী আবিষ্কার করে খবরের শিরোনামে কেপলার । সৌরজগত থেকে প্রায় ৭৫০ আলোকবর্ষ দূরে একটি নুতন গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে যা নাকি কয়লার থেকেও কালো । সৌরজগতের সব থেকে বড় গ্রহ বৃহস্পতির মতই তার আকার । এই জাম্বো গ্রহের এক পোশাকী নামও দিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা - টি আর ই এস-২বি ।     
আমাদের সৌরজগতের বাইরেও কি কোন গ্রহ আছে ? অগনিত নক্ষত্র খচিত রাতের আকাশের দিকে চোখ রাখলে এমন প্রশ্ন মনে আসা স্বাভাবিক । তারপর আবার যে প্রশ্ন মস্তিষ্কের দরজায় নক করবে  সেটা হল এই মহাবিশ্বের কোন একটি গ্রহে কি আমাদের পৃথিবীর মতই প্রাণের স্পন্দন আছে ? এর উত্তর আজও আমরা জানিনা । দূরবীক্ষণ যন্ত্রের আবিষ্কার রাতের আকাশকে নামিয়ে আনলো মাটিতে । নিত্যনুতন আবিষ্কার পুলকিত করে তুললো আমাদের তথ্য ভাণ্ডারকে । ধীরে ধীরে মহাবিশ্বের কিছু কিছু রহস্য আমাদের কাছে পরিষ্কার হতে লাগলো । কিন্তু বহির্বিশ্বে গ্রহের উপস্থিতি পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করা যাচ্ছিলনা ।  কারণটা অবশ্যই দূরত্ব । আসলে একটি তারার আলোতেই আলোকিত হয়ে উঠে গ্রহ । আর দূরত্ব বাড়লে অতি শক্তিশালী দূরবীন দিয়েও গ্রহকে চিহ্নিত করা যায়না । তখন পরোক্ষ উপায়ের উপর নির্ভর করতে হয় । বিজ্ঞানীরা উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ১৯৮৮ সালে প্রথম সৌরজগতের বাইরে গ্রহের সন্ধান পান । শুরু হয় এক নুতন অধ্যায় । তারপর গ্রহ আবিষ্কারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান । সৌরজগতের বাইরে গ্রহের অস্তিত্ব জানার তাগিদেই কেপলারের জন্ম । জন্মের পর থেকেই সে  বহির্বিশ্বের দিকে ক্রমাগত নজর রেখে চলেছে । তার ঝুলিতে এখন ১২২টি  গ্রহ আবিষ্কারের কৃতিত্ব । ওহ বলতেই ভুলে গেছি আসলে কেপলার কোন মানুষ নয়, সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা প্রেরিত একটি মহাকাশযান । জার্মানির বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী কেপলারের নামানুসারেই তার এই নাম যাকে গত ৭ মার্চ ২০০৯ সালে পৃথিবী থেকে প্রেরণ করা হয়েছিল । তারপর থেকেই তার জয়যাত্রা অব্যাহত । কেপলার বেঁচে থাকলে সাম্প্রতিক আবিষ্কারের খবরটা পেয়ে উল্লাসে তিনি মেতে উঠতেন সন্দেহ নেই ! 
     সৌরজগতের বাইরে এমন কৃষ্ণাকার গ্রহের আবিষ্কারে আশ্চর্যান্বিত হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা । কয়লার থেকেও কালো এই গ্রহের ঔজ্বল্ল খুবই কম । গ্রহটির দূরত্ব তার নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে মাত্র ৩০ লক্ষ মাইল  । যেখানে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল ! এত কম দূরত্বের অবস্থানের জন্য এই জাম্বো গ্রহের তাপমাত্রা প্রায় ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস । গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, টাইটানিয়াম অক্সাইড ইত্যাদি উপস্থিতির প্রমাণ রয়েছে ।  বিজ্ঞানীরা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না তার এত কালো হয়ে উঠার মূল কারণ । আসলে এখনো পর্যন্ত ৫৭৩ টি আবিষ্কৃত বহির্গ্রহের সঙ্গে এর চরিত্র যে কিছুতেই মিলছেনা । গ্রহটির কৃষ্ণাঙ্গ হবার নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানই হবে আগামিতে সবথেকে বড় আবিষ্কার । এই গ্রহটি গত ২১শে আগস্ট ২০০৬ এ আবিষ্কৃত হয়েছিল ট্রান্স-আটলান্টিক এক্সো প্ল্যানেট সার্ভের মাধ্যমে । মজার ব্যাপার হল গ্রহটি তখন আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে মহাকাশযান কেপলার এই মাসে তাকে বিশ্লেষণ করে এমন চমকপ্রদ তথ্য দিতে পারে । যেহেতু ঐ গ্রহে জল থাকার সম্ভাবনা খুবই কম, তাই প্রাণের উপস্থিতি সেখানে প্রায় নেই বললেই চলে ।  গ্রহটি কালো হলেও তার প্রতি বিজ্ঞানীদের আকর্ষণ কিন্তু এতটুকুও কমেনি । মহম্মদ রফি জীবিত থাকলে নায়কটি আর ই এস-২বি গ্রহটির লিপে অবশ্যই এই গান গাইতেন –‘হাম কালে হ্যায় তো কেয়া হুয়া... দিলওয়ালে হ্যায়।