Saturday, August 20, 2011

সৌরজগতের বাইরে সবথেকে কৃষ্ণতম গ্রহ আবিষ্কৃত



যুগান্তকারী আবিষ্কার করে খবরের শিরোনামে কেপলার । সৌরজগত থেকে প্রায় ৭৫০ আলোকবর্ষ দূরে একটি নুতন গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে যা নাকি কয়লার থেকেও কালো । সৌরজগতের সব থেকে বড় গ্রহ বৃহস্পতির মতই তার আকার । এই জাম্বো গ্রহের এক পোশাকী নামও দিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা - টি আর ই এস-২বি ।     
আমাদের সৌরজগতের বাইরেও কি কোন গ্রহ আছে ? অগনিত নক্ষত্র খচিত রাতের আকাশের দিকে চোখ রাখলে এমন প্রশ্ন মনে আসা স্বাভাবিক । তারপর আবার যে প্রশ্ন মস্তিষ্কের দরজায় নক করবে  সেটা হল এই মহাবিশ্বের কোন একটি গ্রহে কি আমাদের পৃথিবীর মতই প্রাণের স্পন্দন আছে ? এর উত্তর আজও আমরা জানিনা । দূরবীক্ষণ যন্ত্রের আবিষ্কার রাতের আকাশকে নামিয়ে আনলো মাটিতে । নিত্যনুতন আবিষ্কার পুলকিত করে তুললো আমাদের তথ্য ভাণ্ডারকে । ধীরে ধীরে মহাবিশ্বের কিছু কিছু রহস্য আমাদের কাছে পরিষ্কার হতে লাগলো । কিন্তু বহির্বিশ্বে গ্রহের উপস্থিতি পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করা যাচ্ছিলনা ।  কারণটা অবশ্যই দূরত্ব । আসলে একটি তারার আলোতেই আলোকিত হয়ে উঠে গ্রহ । আর দূরত্ব বাড়লে অতি শক্তিশালী দূরবীন দিয়েও গ্রহকে চিহ্নিত করা যায়না । তখন পরোক্ষ উপায়ের উপর নির্ভর করতে হয় । বিজ্ঞানীরা উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ১৯৮৮ সালে প্রথম সৌরজগতের বাইরে গ্রহের সন্ধান পান । শুরু হয় এক নুতন অধ্যায় । তারপর গ্রহ আবিষ্কারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান । সৌরজগতের বাইরে গ্রহের অস্তিত্ব জানার তাগিদেই কেপলারের জন্ম । জন্মের পর থেকেই সে  বহির্বিশ্বের দিকে ক্রমাগত নজর রেখে চলেছে । তার ঝুলিতে এখন ১২২টি  গ্রহ আবিষ্কারের কৃতিত্ব । ওহ বলতেই ভুলে গেছি আসলে কেপলার কোন মানুষ নয়, সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা প্রেরিত একটি মহাকাশযান । জার্মানির বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী কেপলারের নামানুসারেই তার এই নাম যাকে গত ৭ মার্চ ২০০৯ সালে পৃথিবী থেকে প্রেরণ করা হয়েছিল । তারপর থেকেই তার জয়যাত্রা অব্যাহত । কেপলার বেঁচে থাকলে সাম্প্রতিক আবিষ্কারের খবরটা পেয়ে উল্লাসে তিনি মেতে উঠতেন সন্দেহ নেই ! 
     সৌরজগতের বাইরে এমন কৃষ্ণাকার গ্রহের আবিষ্কারে আশ্চর্যান্বিত হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা । কয়লার থেকেও কালো এই গ্রহের ঔজ্বল্ল খুবই কম । গ্রহটির দূরত্ব তার নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে মাত্র ৩০ লক্ষ মাইল  । যেখানে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল ! এত কম দূরত্বের অবস্থানের জন্য এই জাম্বো গ্রহের তাপমাত্রা প্রায় ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস । গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, টাইটানিয়াম অক্সাইড ইত্যাদি উপস্থিতির প্রমাণ রয়েছে ।  বিজ্ঞানীরা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না তার এত কালো হয়ে উঠার মূল কারণ । আসলে এখনো পর্যন্ত ৫৭৩ টি আবিষ্কৃত বহির্গ্রহের সঙ্গে এর চরিত্র যে কিছুতেই মিলছেনা । গ্রহটির কৃষ্ণাঙ্গ হবার নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানই হবে আগামিতে সবথেকে বড় আবিষ্কার । এই গ্রহটি গত ২১শে আগস্ট ২০০৬ এ আবিষ্কৃত হয়েছিল ট্রান্স-আটলান্টিক এক্সো প্ল্যানেট সার্ভের মাধ্যমে । মজার ব্যাপার হল গ্রহটি তখন আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে মহাকাশযান কেপলার এই মাসে তাকে বিশ্লেষণ করে এমন চমকপ্রদ তথ্য দিতে পারে । যেহেতু ঐ গ্রহে জল থাকার সম্ভাবনা খুবই কম, তাই প্রাণের উপস্থিতি সেখানে প্রায় নেই বললেই চলে ।  গ্রহটি কালো হলেও তার প্রতি বিজ্ঞানীদের আকর্ষণ কিন্তু এতটুকুও কমেনি । মহম্মদ রফি জীবিত থাকলে নায়কটি আর ই এস-২বি গ্রহটির লিপে অবশ্যই এই গান গাইতেন –‘হাম কালে হ্যায় তো কেয়া হুয়া... দিলওয়ালে হ্যায়। 

No comments:

Post a Comment