ঘুড়ি উৎসব মূলত: গুজরাট প্রদেশের হলেও আসামের এক প্রত্যন্ত শহর করিমগঞ্জে পৌষ সংক্রান্তির
দিন সেটা বেশ ঘটা করেই পালিত হত। এই উৎসব আমাদের শহরে কিভাবে আমদানি হল সেটা আমার জানা
নেই। অনেক কথাই আজ মনে পড়ছে। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পর ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ
থেকেই শুরু হয়ে যেত ঘুড়ি চালানো। বাহারি রঙের ঘুড়িতে আকাশ রঙিন হয়ে উঠত। নীলমণি স্কুলের
মাঠে খুব সকালে আমরা বন্ধুরা সবাই ছুটে যেতাম ঘুড়ি নিয়ে। আকাশে পতপত করে ঘুড়ি উড়তে
থাকতো আর আমাদের মধ্যে আলোচনা হত মাঞ্জা নিয়ে। মাঞ্জা বানানোর নানা ফর্মুলা কাগজে লিখে
সেটাই প্রয়োগ করা হত ঘুড়ির সুতোতে, আর চলতো ঘুড়ির প্যাঁচ খেলা। কারো ঘুড়ির সুতো প্যাঁচে
কেটে গেলেই চীৎকার করে বলতাম 'ভোকাট্টা'। আর সেই ঘুড়ি দিশা হীন ভাবে উড়ে চলে যেত অজানা
কোনও এক দেশে। মজার ব্যাপার হল পৌষ সংক্রান্তির দিন ছিল ঘুড়ি উড়ানোর অন্তিম দিন। সেই
অন্তিম দিনেই নীলমণি স্কুলের মাঠে সকাল থকেই শুরু হয়ে যেত সবার আনাগোনা। আবালবৃদ্ধবনিতার
যোগদানে সেটা সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠত এক উৎসবমুখর পরিবেশ। মেড়ামেড়ির ঘর জ্বালিয়ে কিছু
পিঠে মুখে দিয়েই সকাল সাতটায় আমরা যোগদান করতাম উৎসবে। প্যাঁচের খেলার ফাইনাল ম্যাচ
শেষ করে ঘরে এসে চোঙ্গা পিঠে খেতাম। আজ করিমগঞ্জের আকাশ থেকে ঘুড়ি গায়েব, কিন্তু রয়ে
গেছে কিছু স্মৃতি।