Tuesday, February 10, 2015

রামেন্দু ভট্টাচার্য স্মরণে




রামেন্দু স্যারকে নিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি লিখতে হবে সেটা কোনও দিন ভাবিনি। স্যারের অগণিত ছাত্রের মতই আমিও শোকে মুহ্যমান। অকালে নক্ষত্র পতনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা কিভাবে কাটিয়ে উঠবো তাই ভাবছি প্রতি মুহূর্তে
       শৈল শহর শিলং থেকে স্যারের শিলচর শহরে আগমন সেই ১৯৯৭ সালে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগে রিডার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে বরাক উপত্যকায় স্যারের কর্মজীবন শুরু। এর আগে তিনি শিলং এর স্যান্ট অ্যাডমন্ডস্‌ কলেজে অধ্যাপনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র ছিলাম আমরা। আজও মনে আছে- স্যার প্রথম দিন ওনার ক্লাসে এসে 'তুই' বলে আমাকে সম্বোধন করেছিলেন। প্রথম সাক্ষাতেই সবাইকে আপন করে নেবার এক অসাধারণ ক্ষমতা স্যারের ছিল। রামেন্দু স্যারের সঙ্গে জীবনে যারা একবার কথা বলেছে তাকে কোনও দিন সে ভুলতে পারবে না, এমন ভাবেই মনে দাগ কাটতেন তিনি।
       শিলং এর নর্থ ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটি (নেহু) থেকে স্যারের পি এইচ ডি ১৯৮৬ সালে। মূলত: ইনফ্রা রেড আর রমণ এফেক্টের ব্যবহারিক দিক নিয়েই তিনি গবেষণা করেন। তার গবেষণাপত্র দেশ বিদেশের বিখ্যাত সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়পরবর্তীতে গবেষণার জন্য আই আই টি কানপুর এবং ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স, বেঙ্গালোর-এ যান। ১৯৯০ সালে তিনি মর্যাদাপূর্ণ 'ইনসা-জে এস পি এস' ফেলোশিপের জন্য মনোনীত হন, আর প্রযুক্তির তীর্থক্ষেত্র জাপানে যান। সেখানে ছয়মাস গবেষণা করে ভারতে ফিরে আসেন। স্যারের কাজের মান দেখে বিখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক সি এন আর রাও এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি রামেন্দু স্যারকে নিজের ল্যাবরেটরিতে নিয়ে আসেন। সেই ল্যাবরেটরি থেকেই সি এন আর রাওয়ের সঙ্গে তিনটি গবেষণাপত্র পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়। ২০১৩ সালে অধ্যাপক সি এন আর রাও ভারত রত্ন পাবার পর স্যারের কি আনন্দ! সবাইকে গর্বের সঙ্গে অধ্যাপক রাওয়ের কথা বলতেন আর নানা ঘটনার স্মৃতিচারণ করতেন।  
       ২০০৭ সালে পদার্থ বিভাগে আমার শিক্ষকতা শুরু। সেই সুবাদে স্যারকে আরও কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। স্যার সগর্বে সর্বত্র বলতেন যে তাঁর ছাত্র একই বিভাগে অধ্যাপনা করছে এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে। কোনও শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেড়ে চলে যাবার সময় স্যারের খুব কষ্ট হত। বলতেন, তিল তিল করে গড়া এই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে কখনো চলে যাবি না। এই অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদেরকেই আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ব নিতে হবে।
       ভাল শিক্ষক আর গবেষকের পাশাপাশি স্যার একজন ভাল সুশাসকও ছিলেন। স্যারের বৈচিত্র্য ভরা জীবনে খুব স্বল্প সময়ে ডিন স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার, প্রোক্টর, স্কুল অব টেকনোলজির ডিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিফু ক্যাম্পাসের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর আর অবশেষে শিলচর ক্যাম্পাসের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর-এর পদ অলঙ্কৃত করেন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হয়ে ডিফু ক্যাম্পাসে তিনি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। সমস্যায় জর্জরিত সেই ক্যাম্পাসে তিনি শৈক্ষিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনেন। পরবর্তীতে তিনি শিলচর ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে। প্রতিটি পদেই ছিলেন তিনি সমান উজ্জ্বল। নানা সমস্যাকে ম্যাজিক এর মত ভেনিশ করে দেবার এক সহজাত স্বভাব নিয়েই তিনি জন্মেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনকে নানা সময়ে তিনি প্রতিহত করেন বিচার আর বুদ্ধির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে। তাঁর ফর্মুলা ছিল, ছাত্রদের সমস্যা শুনে যতদূর সম্ভব এর সমাধান করা। এতে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাদানুবাদেও তিনি পেছোতেন না। ছাত্রদের পাশেই ছিলেন তিনি আজীবনবিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও আন্দোলনের ঝড় উঠলেই এগিয়ে যেতেন তিনি। সেই ঝড় স্যারের সামনে এলেই স্তিমিত হয়ে যেত। কি যে জাদুকাঠি ছিল তাঁর কাছে ! তিনি ছিলেন মুশকিল আসানের মন্ত্র। এত বড় পদে গিয়েও স্যার ছিলেন খুব সাধারণ। সাবলীল ভাবে সবার সঙ্গে মিশতেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অশিক্ষক আর শিক্ষক সম্প্রদায়ের সবার কাছে রামেন্দু স্যার সমান জনপ্রিয়। জীবন নিয়ে কৌতুক করতেন, আর বলতেন তাঁর জীবন এক খোলা বই। কৌতুক ভরা কথা দিয়ে সবার মন জয় করে নিতেন। কর্মরত অবস্থাতেই তিনি গত ৩১ জানুয়ারি রাত আড়াইটায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেন, আর রেখে যান সবার জন্য হাজারো স্মৃতি।
       স্যারের নেশা ছিল কবিতা লেখার। কবিতা লিখেই ফোন করতেন প্রিয়জনদের, আর শোনাতেন কবিতা। তাঁর চারটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছেনিজেকে কবি বলে পরিচয় দিতে খুব ভালবাসতেন। স্যারের স্বহস্তে লিখিত এক কবিতা আমার অফিসের রিডিং রুমের টেবিলের কাচের নীচে সেই ২০০৯ সাল থেকেই সযত্নে রাখা আছে। সেই কবিতাটি এখানে তুলে দিলাম। এই কবিতার ভাব আজও যে কতটা সত্যি।
      কে বলে ও'রা অতীতের কথা বলে?
      না
      অতীত কথা বলে-
      'দের মুখে।   

(যুগশঙ্খ পত্রিকায় প্রকাশিত - ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫)

Wednesday, January 14, 2015

ভোকাট্টা




ঘুড়ি উৎসব মূলত: গুজরাট প্রদেশের হলেও আসামের এক প্রত্যন্ত শহর করিমগঞ্জে পৌষ সংক্রান্তির দিন সেটা বেশ ঘটা করেই পালিত হত। এই উৎসব আমাদের শহরে কিভাবে আমদানি হল সেটা আমার জানা নেই। অনেক কথাই আজ মনে পড়ছে। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পর ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যেত ঘুড়ি চালানো। বাহারি রঙের ঘুড়িতে আকাশ রঙিন হয়ে উঠত। নীলমণি স্কুলের মাঠে খুব সকালে আমরা বন্ধুরা সবাই ছুটে যেতাম ঘুড়ি নিয়ে। আকাশে পতপত করে ঘুড়ি উড়তে থাকতো আর আমাদের মধ্যে আলোচনা হত মাঞ্জা নিয়ে। মাঞ্জা বানানোর নানা ফর্মুলা কাগজে লিখে সেটাই প্রয়োগ করা হত ঘুড়ির সুতোতে, আর চলতো ঘুড়ির প্যাঁচ খেলা। কারো ঘুড়ির সুতো প্যাঁচে কেটে গেলেই চীৎকার করে বলতাম 'ভোকাট্টা'। আর সেই ঘুড়ি দিশা হীন ভাবে উড়ে চলে যেত অজানা কোনও এক দেশে। মজার ব্যাপার হল পৌষ সংক্রান্তির দিন ছিল ঘুড়ি উড়ানোর অন্তিম দিন। সেই অন্তিম দিনেই নীলমণি স্কুলের মাঠে সকাল থকেই শুরু হয়ে যেত সবার আনাগোনা। আবালবৃদ্ধবনিতার যোগদানে সেটা সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠত এক উৎসবমুখর পরিবেশ। মেড়ামেড়ির ঘর জ্বালিয়ে কিছু পিঠে মুখে দিয়েই সকাল সাতটায় আমরা যোগদান করতাম উৎসবে। প্যাঁচের খেলার ফাইনাল ম্যাচ শেষ করে ঘরে এসে চোঙ্গা পিঠে খেতাম। আজ করিমগঞ্জের আকাশ থেকে ঘুড়ি গায়েব, কিন্তু রয়ে গেছে কিছু স্মৃতি।     

Thursday, September 25, 2014



মঙ্গলময় মঙ্গল অভিযান
'তোমাদের মঙ্গলযান মিশন অবশ্যই সফল হবে। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের প্রতি আমার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে '
          একবছর আগের কথা, আজও যেন কানের পাশে গুনগুন করছে। আমেরিকার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী তথা অধ্যাপক ড. জেসিকা সানশাইনের এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট ভারতীয় বিজ্ঞানীদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার মনোভাব গত বছর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার অবস্থানকালে নাসা-এর সেই বিখ্যাত বিজ্ঞানীর সঙ্গে এই মিশন নিয়ে নানা আলোচনা হয়, আর আনন্দিত হই তাঁর ভারত প্রীতি মনোভাব দেখে।
          এখন মঙ্গলযান মিশন নিয়ে আলোচনার আগে কিছু মজার তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
১) এশিয়া থেকে এই প্রথম কোনও দেশ মঙ্গল গ্রহে এমন সাফল্যসূচক মিশন সফল করতে সমর্থ হয়েছে। জাপান ১৯৯৮ সালে আর চীন ২০১১ সালে মঙ্গল মিশনে অসফল হয়। এমন কি প্রথম বারের চেষ্টায় আমেরিকা কিংবা রাশিয়াও মঙ্গল মিশনের অভিযানে সাফল্য পায়নি।
২) মঙ্গল মিশনের বাজেট ছিল মাত্র ৪৫০ কোটি টাকা! যেখানে হলিউডের ব্লকবাস্টার মুভি 'গ্র্যাভিটি' এর বাজেট ছিল এর থেকে বেশী, প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা। এমন কি মাত্র দু'দিন আগেই মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করা নাসার মহাকাশ যান 'মাভেন'-এর বাজেট আমাদের মঙ্গলযান থেকে নয় গুন বেশী ছিল।
৩) ইসরো হচ্ছে চতুর্থ মহাকাশ সংস্থা যে কিনা সাফল্যমূলক ভাবে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে মহাকাশযান প্রেরণ করতে পেরেছে। এর আগে আমেরিকার 'নাসা', রাশিয়ার 'রাশিয়ান ফেডারেল স্পেস এজেন্সি' আর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের 'ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি' এই সাফল্য পেয়েছিল।
৪)  মঙ্গলযান তৈরি করতে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সময় লেগেছে মাত্র ১৫ মাস, সেখানে নাসার 'মাভেন' মহাকাশযান তৈরি করতে সময় লেগেছিল সুদীর্ঘ পাঁচ বছর।
৫) ভারতের জনসংখ্যা ১২০ কোটির নিরিখে হিসেব করলে এর জন্য প্রতি ভারতীয়ের পকেট থেকে ব্যয় হয়েছে মাত্র চার টাকা
৬) পৃথিবী থেকে মঙ্গল পর্যন্ত দূরত্ব ৬৭ কোটি কিলোমিটার অতিক্রম করতে প্রতি কিলোমিটারে মাত্র ৭ টাকা খরচ হয়েছে মঙ্গলযানের যা ভারতের বিভিন্ন শহরের অটোরিকশার ভাড়া থেকেও কম!
৭) এখনও পর্যন্ত মঙ্গল মিশনে বিভিন্ন দেশ একান্ন বার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একুশটি মিশন সফল। গর্বের ব্যাপার আমাদের প্রচেষ্টা প্রথম বারেই সফল।      
          বলতে দ্বিধা নেই যে মঙ্গল মিশন মহাকাশ গবেষণায় বিশ্বের দরবারে আমাদের সাফল্যের সূচক একটু বাড়িয়ে দিল। এই মিশন নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গল গ্রহে মিথেন গ্যাসের সন্ধান করার পাশাপাশি সেখানের বায়ুমণ্ডলে ডিউটেরিয়াম আর হাইড্রোজেন গ্যাসের সন্ধান করবে 'মারস অরবিটার মিশন'এই অধ্যয়ন করতে দু'টি স্প্রেকটোমিটার, একটি ফটোমিটার, একটি মারস কালার ক্যামেরা আর একটি মিথেন সেন্সর ব্যবহৃত হবে। অতীতে এই গ্রহে জল আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখবে সে। এর থেকেই জানা যাবে মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের খবর। এছাড়াও মঙ্গল পৃষ্ঠে খনিজ পদার্থের সন্ধান করাও এই মিশনের মূল লক্ষ্য।
          পি এস এল ভি-সি২৫ এর মাধ্যমে গত ৫ নভেম্বর ২০১৩ সালে  'মারস অরবিটার মিশন'-কে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। এই পি এস এল ভি বানাতেও ইসরোর ইঞ্জিনিয়ার এবং বিজ্ঞানীদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। বিশ্বের প্রথম সারির মহাকাশ সংস্থাগুলো এই ব্যাপারে ভারতকে তেমন সাহায্য করেনি। সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে বানানো হয়েছিল 'পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল'মঙ্গল-যানের সফল উৎক্ষেপণের জন্য এর অবদানও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।  তাই ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সালে মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে এক ইতিহাস রচিত হল পি এস এল ভি-সি২৫ এর সৌজন্যে। মঙ্গল-যানের সঙ্গে পৃথিবীর কন্ট্রোলরুমের যোগাযোগ উন্নতমানের রেডিও সিগনালের সাহায্যেই হচ্ছে।  মঙ্গলযানে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা যা মিশনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।  সব মিলিয়ে এই মিশনে চেষ্টার কসুর রাখেননি ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
          মিডিয়ার দৌলতে 'লাল গ্রহ' নিয়ে অনেক খবর পাঠকদের কাছে পৌঁছে গেছে। গবেষণার কারণ ছাড়াও রাজনৈতিক কারণে এই মিশন গুরুত্বপূর্ণ। আসলে আমাদের ইসরো ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনের রূপরেখা তৈরি করে রেখেছে। সেই দিন আর খুব দূরে নেই যখন মানুষ চন্দ্রে কিংবা মঙ্গল গ্রহে উপনিবেশ স্থাপন করবে। আমেরিকা কিংবা রাশিয়ার একচ্ছত্র অধিকারকে চ্যালেঞ্জ জনাতেই এই মিশন খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভবিষ্যতে অন্য গ্রহে মানব রহিত মহাকাশযান প্রেরণ করতেও এই মিশন সাহায্য করবে। সেই দিন আর দূরে নেই যখন মহাকাশ যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা আরও মুখ্য হয়ে উঠবে।
          চলে আসি জেসিকার প্রসঙ্গে। মহাকাশ নিয়ে গবেষণার কাজে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে আমেরিকার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেখানেই জেসিকার সঙ্গে আলাপ। নাসার নানা মিশনের সঙ্গে মেয়েটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেখানেই মঙ্গলযান মিশন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রতিদিন লাঞ্চের সময় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হত। ওকে তিনমাস সহকর্মী হিসেবে পেয়ে  ভালই হয়েছিল। আমেরিকার বিজ্ঞান গবেষণা নিয়ে নানা চমকপ্রদ তথ্য ওর কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম। দিনটি আজও মনে আছে, ৫ নভেম্বর ২০১৩। জেসিকা এসে করমর্দন করে গেল, আর পাশাপাশি অভিনন্দন। সেদিন শ্রীহরিকোটা থেকে মঙ্গলযান সফলতার সঙ্গে ছুটে যায় মঙ্গলের দিকে। ভারতের বিজ্ঞানীদের প্রতি ওর অগাধ শ্রদ্ধা দেখে খুব ভাল লাগলো। এখন বিদেশে নানা কনফারেন্সে গেলে নানা দেশের বিজ্ঞানীরা আমদের কাছে ছুটে আসেন ভারতের মহাকাশ মিশনের ভবিষ্যৎ জানতে। ইসরোর এই প্রয়াসের প্রশংসা জানাবার ভাষা আজ নেই। জেসিকাকে এই প্রবন্ধ লেখা শুরু করার আগেই ই-মেল করেছিলাম। এই মাত্র উত্তর আসলো। 'অভিনন্দন ভারতীয় বন্ধু। তোমাদের দেশের আপামর জনসাধারণকে জানাই আমার তরফ থেকে শুভেচ্ছা। এক পদক্ষেপ আরও এগিয়ে গেলে...।'   


- 'দৈনিক যুগশঙ্খ' পত্রিকায় প্রকাশিত (২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪)