Friday, June 17, 2011

মশা মারতে আর কামান দাগাতে হবেনা



দুনিয়ার সবথেকে ভয়ঙ্কর জীব সে ! প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় কুড়ি লক্ষ মানুষ তার জন্য প্রাণ হারায় । লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয় তার নিধনে । কিন্তু তবুও তাকে দমানো যায় না, যেন রক্তবীজের বংশ ! তার নিষ্ঠুর গান আমাদের কর্ণরন্ধ্রে প্রবেশ করলে হাত দু’টি চঞ্চল হয়ে উঠে তাকে পিষে মারার জন্য ! কারণ তার মারাত্মক ছোবলের ফলে সংক্রামিত হতে পারে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু জ্বর নামক ভয়ানক রোগ । পাঠকেরা নিশ্চয় এতক্ষণে অনুধাবন করতে পেরেছেন সেই সেলিব্রেটি ভিলেনের নাম ! ‘মশা বাবাজী’-কে নিয়ে সাতকাহন লেখার আগে একটি সুখবর জানিয়ে দেই । আমেরিকার প্রবাসী বাঙালি বিজ্ঞানী আনন্দশঙ্কর রায় মশাদের বোকা বানাবার এক অনন্য উপায় খুঁজে পেয়েছেন যা নিয়ে রীতিমত হৈ চৈ পড়ে গেছে বিজ্ঞানী মহলে ।   
     ভয়ানক জীবের লিস্টে মশার নাম সবার উপরে । আর তার ঠিক পরেই রয়েছে এশিয়ান কোবরা সাপ । ভাবতেই অবাক লাগে যে সাপের থেকেও ভয়ানক হচ্ছে মশক ! সমীক্ষায় দেখা গেছে সাপের কামড় থেকেও বেশী মানুষের মৃত্যু হয় মশার কামড়ে । আর সেই মশার হাত থেকে বাঁচবার জন্য নানা উপায় বা পদ্ধতি মানুষ অনেকদিন ধরেই ব্যবহার করে আসছে ।  মশাকে নির্মূল করার জন্য নানা কীটনাশক বা ঔষধ ব্যবহার করা হয় । কিন্তু অদ্ভুত উপায়ে মশা সেই সব বাধা অতিক্রম করে আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠে । আর তার শুঁড়ের ছোবলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে জনজীবন ।
     আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া-রিভারসাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী আনন্দশঙ্কর রায় এবং তাঁর সহযোগীরা মশা নিয়ে গবেষণার পর দেখেছেন যে গন্ধ পেলেই মানুষকে ছেঁকে ধরে মশারা । মশার শুঁড়ে ‘ম্যাক্সিলারি পাল্পস’ নামে এক প্রত্যঙ্গের উপস্থিতির জন্যই এই গন্ধের খোঁজ পায় মশারা । বিজ্ঞানী রায় মশাদের বোকা বানাবার জন্য এক দারুণ উপায় বের করেছেন । তাদের গবেষণার বিস্তারিত তথ্য বিখ্যাত ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে ।  আনন্দশঙ্কর এবং তাঁর সহযোগীরা এমন রাসায়নিক মিশ্রণ বানিয়েছেন যা দিয়ে মশার ঘ্রাণেন্দ্রিয়কে বোকা বানানো যেতে পারে । মশা তখন আর খুঁজে পাবেনা মানুষকে । এই মিশ্রণ ব্যবহার করে ভবিষ্যতে বানানো যেতে পারে নানা ‘লোশন’ আর ‘স্প্রে’ ।
     ‘এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন রাসায়নিক মিশ্রণ ব্যবহার করে মশাকে মানুষের সান্নিধ্য থেকে দূরে রাখা সম্ভব । আর এর আবিষ্কার ভবিষ্যতে কীটপতঙ্গ নাশকতার ক্ষেত্রে এক অনন্য অবদান রাখবে’ – বললেন প্রবাসী বিজ্ঞানী আনন্দশঙ্কর রায় । নিঃসন্দেহে এই আবিষ্কার লক্ষ লক্ষ মানুষকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ‘ইয়েলো ফীভার’ ইত্যাদির করাল আক্রমণ থেকে অব্যাহতি দেবে । আর এর জন্য বৈজ্ঞানিক মহলে বিজ্ঞানী রায়ের কদর অনেক বেড়ে গেছে ।
     মশা নিজের চরিত্র রাজনৈতিক নেতার মতই খুব তাড়াতাড়ি বদল করতে পারে । মশা নাশকারী ‘কয়েল’ কিংবা ‘লিকুয়িডেটর’ ব্যবহার করে এখনো পর্যন্ত মশার আক্রমণ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্তি পাওয়া যায়নি । বিবর্তনের ফলে হয়তো আবারও মশা খোল পালটে নুতনভাবে আক্রমণের পথ আবিষ্কার করবে । আসলে রক্ত পিপাসীদের রক্তের স্বাদ ছাড়া যে আর কিছুই ভাল লাগেনা ! তবে বিজ্ঞানী রায় আর তার সহযোগীরা যে ভাবে মশাকে আক্রমণ করেছেন তার ফলে আপাতত মশার তরফ থেকে পালটা আক্রমণের সম্ভাবনা খুবই কম ।    
     মশার অসহ্য কামড় সহ্য করে প্রবন্ধখানি লেখার চেষ্টা করছি । মশাদেরও বোধহয় ইচ্ছে নেই এই বিষয়ে প্রবন্ধ লেখা হোক ।

No comments:

Post a Comment