Tuesday, August 24, 2010

চাঁদের আকার দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে, দাবি নাসার বিজ্ঞানীদের




চাঁদ নিয়ে জবর খবর তাদেরকে রাতারাতি ‘তারকা’ বানিয়ে দিল ! ‘সায়েন্স’ জার্নালে গত ২০শে আগষ্ট, ২০১০ গবেষণাপত্রটি বের হবার পর বিজ্ঞানীমহলে আলোড়ন তুললেন থমাস ওয়াটার্স আর তার সহযোগীরা । চাঁদের ব্যাসার্দ্ধ নাকি গত ১০ কোটি বছরে ১০০ মিটার কমেছে, আর ভবিষ্যতে সেটা আরো কমবে ।
    আমাদের পৃথিবীর অতি আদরের উপগ্রহ নিয়ে বিজ্ঞানীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও আগ্রহের সীমা নেই । সাহিত্য, ধর্ম, সংস্কৃতি সর্বত্রই তাঁর অবাধ গতি । শিশুকে যেমন চাঁদের মায়াময় রূপ দেখিয়ে মন ভুলানো যায়, তেমনি আবালবৃদ্ধবনিতাও তার নির্মল আলোর যাদুতে মোহিত হয়ে যান । রাতের আকাশে তার উপস্থিতি পরিবেশকে এক আলাদা পবিত্রতায় নিয়ে যায় । উপকথা আর রূপকথার জগতে কখনো শুনা যায় ‘চাঁদের বুড়ির’ কথা যে নাকি অবিরত চরকা কেটে যাচ্ছে । এই চাঁদই কবিদের চোখে কখনো ঝলসানো রুটি আবার কখনো আঁধার প্রেমের সাক্ষী ।    
    চাঁদের মাটিতে ১৯৬৯  সালে পদার্পন করার পর ইতিহাস গড়েছিলেন নীল আর্মষ্ট্রং আর তার সহযোগীরা । যা আগে শুধু স্বপ্ন ছিল সেই চরম সত্যকে বিজ্ঞানের ভেলকিতে বাস্তব করে দেখালেন বিজ্ঞানীরা । তারপর হয়েছে চাঁদ নিয়ে নানা অভিনব আবিষ্কার । ভারতের জন্যও শ্লাঘার ব্যাপার যে ‘ইসরো’ প্রেরিত কৃত্রিম উপগ্রহ ‘চন্দ্রযান-১’ মিশনও সাফল্যের মুখ দেখে । ২০০৯ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে জলের উপস্থিতির কথা সর্বপ্রথম ভারতের বিজ্ঞানীরাই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেন । তারপর নাসা ৯ অক্টোবর, ২০০৯ পরীক্ষামূলক ভাবে দক্ষিণ মেরুতে দ্রবীভূত জলের সন্ধান পায় । সাম্প্রতিক এই দুরন্ত আবিষ্কারের নেপথ্য নায়ক কিন্তু ‘নাসা’ প্রেরিত ‘লুনার রিকনেশাঁ অরবিটার’  যা গত ১৮ জুন, ২০০৯ এ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ।
চন্দ্র পৃষ্ঠের এই চ্যুতি গুলোর ফটো বিশ্লেষণ করেই নাসার বিজ্ঞানীরা চন্দ্রের সঙ্কুচিত হবার খবরটি প্রকাশ করেছেন ।    

    থমাস ওয়াটার্স আর তার সহযোগীরা ‘লুনার রিকনেশাঁ অরবিটার ক্যামেরা’ দিয়ে চন্দ্র পৃষ্ঠের তোলা ফটো গুলোর পুঙ্কানুপুঙ্ক বিশ্লেষণ করে এই লক্ষ্যে পৌছেছেন যে চাঁদের আকার সঙ্কুচিত হয়েছে । এই সঙ্কুচনের হার গত দশ কোটি বছরে ১০০ মিটার ! আগামিতেও চাঁদের ব্যাসার্দ্ধ কমার আশঙ্কা আছে । নাসার ‘লুনার রিকনেশাঁ অরবিটার’ মিশনের মূল উদ্দেশ্য হল চন্দ্রপৃষ্টের গঠন নিয়ে বিস্তারিত অধ্যয়ন করা । আসলে ১৯৭০ সালের প্রাক্কাল থেকেই ‘অ্যাপেলো ১৫, ১৬ এবং ১৭’ মহাকাশযানগুলো চন্দ্রের খুব কাছ থেকে ফটো তুলে পৃথিবীতে পাঠাতে শুরু করে । তখন চাঁদের বিষুবরেখার বরাবর অনেক চ্যুতি বিজ্ঞানীদের নজরে আসে । এই চ্যুতিগুলো দেখতে কিছুটা ফাটলের মত । বিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘লোবেট স্কার্পস’ বলা হয় । “অ্যাপেলো মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল চাঁদের মাটিতে মানুষ অবতরণ করানো, তাই অ্যাপেলোর পাঠানো ছবিগুলো মূলতঃ বিষুবরেখা কেন্দ্রিক ছিল” । বক্তা আমেরিকার ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর আর্থ এন্ড প্ল্যানেটারি স্টাডিসের বিজ্ঞানী থমাস ওয়াটার্স যিনি এই প্রজেক্টের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে যুক্ত । “বর্তমান মিশনে আমরা চাঁদের বিষুবরেখা ছাড়া উচ্চ অক্ষাংশেও চ্যুতির সন্ধান পেয়েছি । সেটা সম্ভব হয়েছে আল্ট্রা উচ্চপ্রযুক্তির ক্যামেরা ফটোগ্রাফি থেকে” । ‘লুনার রিকনেশাঁ অরবিটার ক্যামেরা’  এর সাহায্যে চৌদ্দটি ‘লোবেট স্কার্পস’ এর সন্ধান পাওয়া গেছে যার মধ্যে সাতটি ৬০ ডিগ্রি অক্ষাংশে পাওয়া গেছে । এর থেকে বোঝা যায় যে এই চ্যুতিগুলো চাঁদের সবদিকেই ছেয়ে আছে । আশা করা যায় যে আগামীতে তেমন আরো অসংখ্য ‘স্কার্পস’ এর সন্ধান পাওয়া যাবে ।       
    চাঁদের পৃষ্টে এই ‘লোবেট স্কার্পস’ হবার কারণটাই বা কি ? আর এর সঙ্গে সঙ্কুচনের কি সম্পর্ক ? বিজ্ঞানীদের মতে চন্দ্র যখন সৃষ্টি হয়েছিল তখন সে খুব গরম আর গলিত অবস্থায় ছিল । চাঁদের অভ্যন্তর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হওয়ার জন্য তার আকার কমতে থাকে, আর এর প্রভাব পড়ে বহির্পৃষ্টে । আভ্যন্তরীণ আকার কমার দরুণ বহির্পৃষ্টে তখন চ্যুতির সৃষ্টি হয় । এই চ্যুতিগুলোর অধ্যয়ন করে সঙ্কুচনের হার হিসেব করে বের করা যায় । এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বুধ আর মঙ্গলগ্রহেও এই চ্যুতি দেখা গেছে যা কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তারিত হয় । আর চাঁদের ক্ষেত্রে তা কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত হয় ।    
    আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ‘আন্তর্জাতিক চন্দ্রদর্শন রাত্রি’ হিসেবে উদযাপন করা হবে সারা বিশ্বে । মূলতঃ চন্দ্রবিজ্ঞান আর এর আবিষ্কারের কথা জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য বিজ্ঞানীদের তরফ থেকে এই আয়োজন । সবথেকে মজার ব্যাপার হল ছোট দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও চাঁদের সুন্দর পাহাড় বা গহবর গুলো খুব ভালো দেখা যায় । তাই বিশ্বের নানা স্থানে ঐ বিশেষ রাত্রে  চন্দ্রদর্শনের আয়োজন করা হবে ।
    এই রাত্রিটা অন্যান্য রাত্রির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । এক আলাদা আমেজ, একটু রোমান্টিক ভাবনা, আর ...বিজ্ঞান - সবই আছে । তাই ব্যস্ততার ফাকে একটু রোমান্টিক হয়ে উঠতে কে না চায় !!!

1 comment:

  1. লেখাটা ভালো লাগল। আজ যুগশঙ্খে 'মোবাইল আতঙ্ক' নিয়ে লেখাটা পড়িয়ে আমার স্ত্রীর আতঙ্ক দূর করতে পারলাম। লেখাটার কথা আমার ক্লাসেও ছাত্রদের বললাম। ওটি এই ব্লগে তোলনি কেন? তুলে দাও!

    ReplyDelete